Information and Technology: চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার কারণ ও সমাধান

চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার কারণ ও সমাধান

বর্তমান বাজারের প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোনই দীর্ঘক্ষণ চার্জ ধরে রাখার সক্ষমতা দাবি করে। একটি সাধারণ স্মার্টফোনের ব্যাটারীর চার্জ ৭-৮ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। একটি স্মার্টফোন কতক্ষণ পর্যন্ত চার্জ ধরে রাখতে সক্ষম, এই বিষয়টি যারা স্মার্টফোন ক্রয় করে থাকেন, তাদের কাছে মূখ্য একটি বিবেচনার বিষয়।
Mobile Charger, Charger, Charge, Android, Info, Inforation


কিন্তু তার পরেও বেশিরভাগ মানুষই কিছুদিন ব্যবহারের পর থেকেই তাদের স্মার্টফোনের ব্যাটারীর চার্জের স্থায়ীত্ব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম বিশেষ করে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমযুক্ত ফোন বা স্মার্টফোনের ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যায়। পুরো চার্জ দিলেও তা একদিন পর্যন্ত টিকে না। কি কারণ তা অনেকেই খুঁজে পান না। যদিও মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে এমনটি হয়ে থাকে বলে মনে করা হয়।

মূলত কয়েকটি কারণে এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে, এগুলো হল-
১. ভাইরাস কিংবা ম্যালওয়ার,
২. ব্যাটারী সমস্যা
৩. সময়মতো অ্যাপস আপডেট না রাখা,
৪. নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপস ব্যাটারীর চার্জ বেশি খরচ করে।

তবে সাধারণ কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে ব্যাটারির চার্জ বেশি সময় ধরে রাখা যায়। ব্যাটারির চার্জ একটু বেশি সময় ধরে রাখতে খুব অল্প সময়ে এ ধরনের পরিবর্তন আনা যেতে পারে।

ব্যাটারীর যত্ন নিন:
ব্যাটারীর চার্জ সব সময় ৪০% থেকে ৮০ % এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। ঘন ঘন চার্জ দিন, তবে চার্জ দেওয়াটা যেন আবার অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে না যায়। চার্জ কমে গেলে যেমন চার্জ দেবেন কিন্তু মাঝেমধ্যে আবার ব্যাটারির চার্জ সম্পূর্ণ শেষ করে ফেলবেন। 

নিজের চার্জার ব্যবহার করুন:
আপনি যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন, যারা প্রায় সময়ই অন্যের চার্জার দিয়ে যেখানে সেখানে ফোন চার্জ করেন, তাহলে আপনার জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। আপনি আপনার অজান্তেই আপনার ফোনের ব্যাটারীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। চার্জের প্রয়োজনের সব সময় আপনার নিজের চার্জারটিই ব্যবহার করুন। কারণ অন্যান্য চার্জার আপনার ফোনের ব্যাটারী, চার্জ ধারণ ক্ষমতা এবং আয়ুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। 
Mobile Charger, Mobile, Charge, Personal Charger, Personal, Info, Tech


যদি কোন কারণে অন্য কারো চার্জার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়েই পড়ে, তাহলে তার ফোনের চার্জারের ইনপুট-আউটপুট ভোল্টেজ এবং আপনার ফোনের চার্জারের ইনপুট-আউটপুট ভোল্টেজ একই কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন।

চলমান অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করা:
বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় কোন একটি প্রোগ্রাম চালিয়েছেন কিন্তু বন্ধ না করে অন্য একটি প্রোগ্রাম চালাচ্ছেন। এভাবে দিনের পর দিন টাস্কে অনেক অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়ে থাকে। তাই এগুলোকে ক্লিয়ার করার একটি সহজ উপায় আছে। এই প্রক্রিয়াটি একেক ফোনে একেক রকম থাকে। তবে বেশিরভাগ এন্ড্রয়েড ফোনের ‘মেনু’ বাটনটি চেপে ধরলে সব চলমান অ্যাপস এর তালিকা আসবে এবং ডানে কিংবা বামে ড্রাগ করে ছেড়ে দিলেই সেটা চলে যাবে। আইফোনের ক্ষেত্রে ‘হোম’ বাটনটি চেপে পরপর দুইবার চাপলেই চলমান অ্যাপস এর তালিকা আসবে এবং ডানে কিংবা বামে ড্রাগ করে ছেড়ে দিলেই সেটা চলে যাবে।

চার্জ সম্পূর্ণ শেষ হতে দিন:
অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী তাদের ফোনের চার্জ সম্পূর্ণ শেষ হবার পূর্বেই পুনরায় চার্জিং করে থাকেন। চার্জ শেষ হয়ে আসতে থাকলে প্রতিটি ফোনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জার সংযুক্ত করার জন্য সংকেত দিয়ে থাকে। প্রত্যেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর মনে রাখা উচিৎ যে, ব্যাটারীরও একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা পর্যন্ত চার্জ গ্রহণের ক্ষমতা থাকে। বার বার অকারণে চার্জ করার ফলে ব্যাটারীর দীর্ঘায়ু অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। 
Battery, battery capacity, capacity, battery charger


প্রতিটি লি-আয়ন ব্যাটারীই ৩০-৮০ শতাংশ চার্জ ধারণ কালীন সময়ের মধ্যে নিজেদের শ্রেষ্ঠ উপযোগিতা প্রদর্শনে সক্ষম হয়ে থাকে। যদি চার্জ তার নিচে নেমে আসে, তখন আপনি অবশ্যই ফোনটি চার্জ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। একইভাবে ৮০ শতাংশ চার্জ হয়ে যাবার পর আপনি চাইলে সেটি পুরোপুরি চার্জ না করেও ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যাটারীকে যদি আমরা আমাদের নিজের শরীরের সাথে তুলনা করি, তাহলে বলা যায় যে আমাদের যেমন মারা যাবার ঠিক আগ মুহুর্তে বিশ্রাম করার প্রয়োজন নেই। অথবা পুরোপুরি ৮-৯ ঘন্টা ঘুম না হলেই যে আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারবো না, এমন কোন শর্ত নেই। স্মার্টফোনের ব্যাটারীর ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই ধরনের।

ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখা:
ফোনের ব্রাইটনেস বাড়িয়ে রাখলে চার্জ বেশি ফুরোয়। ফোনের সেটিংস থেকে এটি পরিবর্তন করা যায়, আবার কোনো কোনো মোবাইলে ব্রাইটনেস পরিবর্তনের জন্য শর্টকাট কি-ও থাকে।

প্রয়োজন ছাড়া সব বেতার সংযোগ বন্ধ:
জিপিআরএস/এজ, জিপিএস, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথের মতো বেতার সংযোগগুলো প্রয়োজনের সময় ছাড়া বন্ধ রাখা উচিত। কারণ, এই সংযোগগুলো চালু থাকলে সেগুলো নিকটবর্তী সংযোগের উৎসটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে থাকে। আর এই সময়ে যে পরিমাণ ব্যাটারি খরচ হয়, তা সেবা ব্যবহারের সময়ের চেয়েও বেশি।

পুশ নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা:
ই-মেইল, ফেসবুক, গুগল প্লাস, টুইটারসহ আরও বিভিন্ন ধরনের অ্যাপলিকেশনে ‘পুশ নোটিফিকেশন’ নামের একটি সুবিধা থাকে। যেটি চালু থাকলে মোবাইল ফোনটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর সার্ভার থেকে নতুন তথ্য সংগ্রহ করে। ফলে প্রয়োজন না থাকলেও নির্দিষ্ট সময় পর পর ফোনটি নিজের মতো করে কাজ করবে, আর চার্জ খরচ হবে।

পাওয়ার সেভার অ্যাপস:
কিছু অ্যাপস আছে যেগুলো আমরা প্রয়োজন ছাড়াই চালিয়ে রাখি অথবা আমাদের অজান্তেই এই অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসগুলো চলতে থাকে। তাই এইগুলো বন্ধ করার দুইটি উপায় আছে, একটি হলো মোবাইলের বাই-ডিফল্ট অ্যাপ্লিকেশন ম্যানাজার থেকে এগুলোকে ডিজ-অ্যাবল করা। এই প্রক্রিয়াটি অনেকের কাছেই জটিল মনে হতে পারে। তবে সহজ আরও একটি উপায় আছে সেটা পাওয়ার সেভার অ্যাপস ব্যবহার। এই অ্যাপসটির মাধ্যমে চলমান অ্যাপস এর তালিকাটি দেখতে পাবেন এবং সেই অনুযায়ী বন্ধ রাখতে পারবেন।

ভাইরাস কিংবা ম্যালওয়ার:
Antivirus, Virous, Anti virus, antivirus program, Program

ফোনে ভাইরাস থাকলেও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই কোন একটি এন্টিভাইরাস দিয়ে ফোনটি ক্লিন করে দেখুন।

ব্যাটারী সমস্যা:
কখনো কখনো ফোনের ব্যাটারী অনেক বেশি গরম হয়ে যায় কিংবা তারাতারি ১০০% চার্জ দেখায়। ব্যাটারী অনেক পুরনো হয়ে গেলে এমনটি হতে পারে। তাই সম্ভব হলে ব্যাটারীটি পরিবর্তন করে নিন। আবার কখনো কখনো নতুন ফোনেও এই সমস্যা হয়।  এক্ষেত্রে প্রথমে ব্যাটারীটি খুলে ৫ মিনিট রেখে দিয়ে আবার লাগিয়ে দেখতে পারেন। ব্যাটারীর চার্জারের কারণেও এমনটি হতে পারে। তাই চার্জারটি পরিবর্তন করে দেখুন।

সময়মতো অ্যাপস আপডেট রাখুন:
কিছু দিন পরপরই দেখবেন বিভিন্ন অ্যাপসগুলোর আপডেট আসছে। অ্যাপস এর বাগমুক্ত করা ও নতুন ফিচার যুক্ত করার জন্য সাধারণত আপডেট পাঠানো হয়। তাই এগুলো আপডেট রাখুন।

No comments:

Post a Comment

Most View

মোবাইলে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস

বর্তমান প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষও ডিজিটালের উপর ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। বাড়িতে বসেই এখন ফোনের বিল , ইলেকট্র...